বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার
মহান বিজয় দিবসে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের উপর হামলা ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরের শহরের খানপুর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান গ্রেফতারের এর সত্যতা নিশ্চিত করে সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, ১৬ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাসহ পূর্বের একটি নাশকতার মামলায় সাখাওয়াৎ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি সাখাওয়াতের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের মামলায় তিনি আগাম জামিন পেয়েছেন দাবি করলেও এখনও পর্যন্ত জামিনের কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে তিনি বলেছেন কাগজ আছে, সে কাগজ দেখাতে পারলে পূর্বের নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
এদিকে ১৮ ডিসেম্বর সকালে উচ্চ আদালতের বিচারপতি আবদুল হাফিজ ও ইজাহারুল হক আকন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও একেএম জহিরুল হকের পৃথক বেঞ্চ অ্যাড. সাখাওয়াতসহ বিএনপির দশ নেতাকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে আদালতের সেই জামিন আদেশ থানায় এখনও জমা দেওয়া হয়নি।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সকাল ১০ টার দিকে শহরের দুই নম্বর রেল গেট এলাকায় ৭১ প্রজন্ম ব্যানারে স্বেচ্ছাবেসক দল, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা বিজয় র্যালি বের করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় এসআই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির ১৯ নেতার নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ৩শ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে।এই মামলায় এর আগে গত তিনদিনে পুলিশ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ.টি.এম কামালসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এই ৭ জনকে পুলিশ নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খানম এর আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, আজ গ্রেফতার হওয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল
দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মিডিয়ার প্রচারে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
পরে ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক ও বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করেন। ওই নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন আইভী। সাখাওয়াৎ পান ৯৬ হাজার ৪৬ ভোট। আইভীর সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করে পরাজিত হলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি।
মূলত ওই নির্বাচনের পর থেকেই জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেন অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন। বিভিন্ন সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচীতে রাজপথে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। পরে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতির পদ পান।